মোদী জমানায় বিরোধী কণ্ঠস্বর দমিয়ে রাখাটাই চল হয়ে দাঁড়ালেও বিরোধী ঐক্য তেমন ভাবে চোখে পড়ছিল না। বিজেপির বিরুদ্ধে কেবল কংগ্রেস নয়, এনসিপি, আপ, ডিএমকে, সমাজবাদী পার্টি, আরজেডি, তৃণমূল কংগ্রেসেরও ভূরি ভূরি অভিযোগ রয়েছে। তাদের লাগাতার অভিযোগ, রাজনৈতিক স্বার্থ চরিতার্থ করতে কেন্দ্রে ক্ষমতায় থাকা বিজেপি বিভিন্ন কেন্দ্রীয় এজেন্সিকে অপব্যবহার করছে। সিবিআই ও ইডিকে দিয়ে গেরুয়া শিবির বিরোধীদের কোণঠাসা করছে। এর বিরুদ্ধে বিরোধী দলগুলি আন্দোলন যে করছে না তা নয়, কিন্তু তা দলগতভাবে হলেও খাপছাড়া। অর্থাৎ সেই আন্দোলন কেন্দ্রের শাসক দলের রাতের ঘুম কেড়ে নেবে তেমন কোনও আন্দোলনই তারা এখনও পর্যন্ত গড়ে তুলতে পারেনি। কারণ, গেরুয়া শিবির রাজনৈতিক প্রতিপত্তির দিক দিয়ে কার্যত এখনও পর্যন্ত অপ্রতিরোধ্য।
এই অবস্থায় সমস্ত বিরোধী রাজনৈতিক দল এক মঞ্চে না এসে দাঁড়ালে যে আগামী ‘২৪–এর লোকসভা নির্বাচনে সেরকম কোনও সাফল্য পাওয়া যাবে না, সেকথা বিরোধী রাজনৈতিক দলগুলি খুব ভাল করেই জানে বোঝে। কিন্তু বিভিন্ন ইস্যুতে আলাদা অবস্থান বা বিভিন্ন রাজ্যে ভিন্ন সমীকরণের কারণে বিরোধী রাজনৈতিক দলগুলি একছাতার তলায় এসে দাড়ানো হচ্ছিল না। রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা বুঝতে পারছিলেন, বিরোধী দলগুলির ঐক্যবদ্ধ হওয়ার জন্য একটা ইস্যুর প্রয়োজন, যা তাদের কাছাকাছি আনতে পারবে। রাহুল গান্ধীর সাংসদ পদ খারিজ যেন সেই বড়সড় ইস্যু হয়ে দাড়িয়েছে।
রাহুল–পর্বে সব ক’টি বিরোধী দলের প্রতিবাদ ২০২৪–এর লোকসভা ভোটের আগে বিরোধী ঐক্যের সলতে পাকানো — তর্কের খাতিরে এ কথা মেনে নিলেও রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা কিন্তু তা নিয়েও সংশয় প্রকাশ করছেন। কারণ, বিরোধী শিবিরেরই অনেকের বক্তব্য, আগামী বছরের লোকসভা ভোটে জাতীয় স্তরে বিরোধী ঐক্য তৈরি করতে গেলে বিজেপি–বিরোধী আঞ্চলিক দলগুলিকে তাদের নিজের নিজের এলাকায় লড়াইয়ের মাঠ ছেড়ে দিতে হবে কংগ্রেসকেই। প্রসঙ্গত, রাহুল গান্ধীর সাংসদ পদ খারিজের দিন ঘটনাচক্রে ১৪টি বিরোধী দল ইডি এবং সিবিআইয়ের সক্রিয়তার বিরুদ্ধে একত্রে সুপ্রিম কোর্টে মামলা করেছ। জাতীয় স্তরে বিরোধী রাজনীতিতে তৈরি হওয়া এই দু’টি ঘটনাও যে ২০২৪–এর লোকসভা ভোটের আগে বিরোধীদের ঐক্যে কতটা প্রভাব বিস্তার করবে, তা নিয়েও প্রশ্ন উঠেছে।
২০২৪–এর নির্বাচন জিতে বিজেপি ফিরে এলে দেশের সাংবিধানিক গণতান্ত্রিক কাঠামোটি যে ধ্বংস হয়ে যাবে তা সমস্ত রাজনৈতিক দলই ভালো করে জানে। কিন্তু সেই ফ্যাসিস্ট শাসককে ভোটে হারাতে গেলে দলের নীতি বা আদর্শ ক্ষুণ্ণ না করে বিরোধী ঐক্যে এক ছাতার তলায় সামিল হতে হবে। ঐক্যের মনোভাব অন্তত এক বছর অটুট রাখতে হবে। তা নাহলে ভোট যুদ্ধে বিজেপিকে হারানো যাবে না। আর বিজেপিকে হটাতে না পারলে স্বৈরশাসনের হাত থেকে কোনও ভাবে রক্ষা মিলবে না। বিরোধীদের জোট সার্বিক হবে কি হবে না তা অনেক পরের প্রশ্ন, কিন্তু গণতন্ত্র পুনরুদ্ধারের জন্য এই পরিস্থিতে বিরোধী জোট গড়াটা জরুরী।
More Stories
ব্রিগেডের জনগর্জন সভায় TMC লোকসভার প্রার্থী ঘোষণা
রাম নামে গ্রাম রামের নামে পাড়া
বাংলায় আগুন জ্বলবে ! বিরোধীদের চক্রান্তে ইঙ্গিত কুণাল