April 27, 2024

কথা হোক ঘরে বাইরে

উত্তর-পূর্বের রাজ্য মণিপুরে দীর্ঘ কয়েক মাস ধরে আগুন জ্বলছে। আদিবাসী অধ্যুষিত পাহাড়ি রাজ্যের ইম্ফল উপত্যকায় বসবাসকারি মেইথেই আর উপত্যকার চারিদিক ঘিরে থাকা পার্বত্য অঞ্চলে বসবাসকারি কুকিদের মধ্যে জাতিগত সংঘর্ষের জেরে মণিপুর উত্তপ্ত। মণিপুরের বিজেপি সরকার মেইথেই সম্প্রদায়কে তপশিলী আদিবাসী সংরক্ষণের আওতায় আনতে চাওয়ায় সংরক্ষণের বিরোধিতায় নামে কুকি-সহ অন্যান্য আদিবাসী গোষ্ঠী। তাদের আশঙ্কা মেইথেই সম্প্রদায় আদিবাসী স্বীকৃতি পেলে প্রকৃত আদিবাসীরা জঙ্গলের সাংবিধানিক অধিকার হারাবে, জঙ্গলে ভাগ বসাবে মেইথেই। কারণ, রাজধানী ইম্ফল সংলগ্ন এলাকায় থাকার ফলে মেইথেইরা রাজনৈতিক ও অর্থনৈতিক ভাবে তুলনায় অনেক বেশি সুবিধাজনক অবস্থায়। একইসঙ্গে উপত্যকায় জনঘনত্ব বেশি হওয়ায়, বিধানসভা আসনের সংখ্যাও বেশি। এই অবস্থায় মেইথেই সম্প্রদায়কে উপজাতি হিসাবে স্বীকৃতিদানের উদ্যোগ শুরু হয়েছে বলে আদিবাসীরা জঙ্গলের অধিকার হারানোর ভয়ে প্রতিবাদ শুরু করেন। কার্যত আদিবাসীদের মনে অধিকার হারানোর ভয় সৃষ্টি করেছে কেন্দ্র ও মণিপুরের বিজেপি সরকার।

মণিপুরে জাতিগত সংঘর্ষে অগ্নিসংযোগ, লুট, হিংসায় মানুষের মৃত্যু মিছিলের মধ্যে সব থেকে গুরুত্বপূর্ণ ঘটনা হল মেইথেই পুরুষদের হাতে দুই কুকি মহিলাকে নগ্ন করে সকলের সামনে প্যারেড করানো। মে মাসের ওই যৌন নিগ্রহের ঘটনার মর্মান্তিক ভিডিয়ো সম্প্রতি ইন্টারনেটে প্রকাশিত হওয়ায় তোলপাড় হয় গোটা দেশ। একদিকে মে মাস থেকে শুরু হওয়া হিংসায় কমপক্ষে ১৩০ জনের মৃত্যু, আহত চার শতাধিক মানুষ, পাশপাশি পুলিসের অস্ত্রাগার লুঠ, শতাধিক গির্জা এবং এক ডজনেরও বেশি মন্দির ধ্বংস হয়েছে এবং বহু গ্রাম আক্রান্ত হয়েছে। পাশাপাশি হিংসা দমন করতে সেনা, আধাসামরিক বাহিনী এবং পুলিস ব্যর্থ হওয়ায় ৬০,০০০ এরও বেশি মানুষ ঘরছাড়া হতে বাধ্য হয়েছেন। এত কিছুর মধ্যে আবার ভাইরাল হওয়া ভিডিও — একদল যুবক দুটি মহিলাকে যৌন নিগ্রহ করতে করতে টেনে হিঁচড়ে নিয়ে যাচ্ছে। দেশশুদ্ধ মানুষ লজ্জায়, ঘেন্নায় ছি ছি করেছেন, ক্ষোভে প্রতিবাদ দেখিয়েছেন আর প্রশাসন? তারা যথারীতি নিজেদের দায় এড়িয়ে গিয়েছেন। কিন্তু মণিপুরের লাগাতর দাঙ্গা পরিস্থিতি, পুলিশের থানা বা চৌকি লুঠ, দাঙ্গাকারীর হাতে অত্যাধুনিক অস্ত্র যা নাকি পুলিশের কাছেও নেই এবং ভয়ংকর নারী নির্যাতনের ঘটনা থেকে একটা বিষয় স্পষ্ট রাষ্ট্রের আইন-শৃঙ্খলা-পুলিশ-প্রশাসন নিষ্ক্রিয়, তারা দাঙ্গাকারীদের নিরস্ত্র করতে বিশেষ পদক্ষেপ নেয়নি।