May 8, 2024

কথা হোক ঘরে বাইরে

                    

বিশ্বে মানবজাতির সব সম্প্রদায় ও গোষ্ঠীর লিখিত অলিখিত ইতিহাস আছে ।  শুধু রাজা মহারাজারা তাদের যুদ্ধবিগ্রহের কাহিনী ইতিহাস নয়, মানুষের ধর্ম , কর্ম ও জীবন চর্চার প্রকৃতি সংস্কৃতি ও নানা বিষয়ে সমন্বয়ে এই বিবরণ। তবে এই বিবরণের প্রারম্ভিক কাঠামো হলো মানুষের নৃতাত্ত্বিক ভাষ্য এই কাঠামোকেই ভিত্তি করি দেশের সামগ্রিক সমাজ ও সংস্কৃতি গড়ে ওঠে I

বৈদিক যুগে চতুরবর্ণকে কেন্দ্র করে আবর্তিত  I ব্রাহ্মণ ক্ষত্রিয় বৈশ্য ও শুদ্ধ এই চতুবর্ণের সামাজিক অবস্থানগত কোন বৈষম্য ছিল না বলে মনে হয় I বৈদিক যুগের গুন ও কর্মের ভিত্তিতে বর্ণ বিনীত হতো। জাতির ভেদ ও শ্রেণি ভেদ ছিল না। গুন ও কর্ম অনুসারে বর্ণান্তর অর্জিত হতো। এই চতুবর্ণের সংমিশ্রণে ভারতের নানা শ্রেণীর নানা জাতি ও উচ্চশ্রেণীর উদ্ভব ঘটে I তাছাড়া নানা সময় বহিরাগতগণ ভারতে এসে বসবাস করায় জাতি ও সম্প্রদায়গত মিশ্রন নানা রূপান্তর ঘটেছে বিভিন্ন ক্ষেত্রে I

পালযুগে বৌদ্ধধর্মের প্রাধান্য ছিল ,পরে সেনরাজাদের আমলে ব্রাহ্মণ্যবাদের পুনরুত্থান হয় । রাজ্যে সামাজিক ভ্রষ্টাচার ও নৈতিকতার অধঃপতন দেখে বল্লাল সেন বিচলিত হয়ে শাস্ত্রবিদদের পরামর্শ মত কৌলিন্য প্রথার প্রবর্তন করেন এবং বর্ণহিন্দুদের মধ্যে জলচল নয়টি শাখার প্রবর্তন করে -এ কথার পূর্বেই উল্লেখ করা হয়েছে I এই নয়টি শাখাই নবশায়ক  I কৌলিন্য প্রথা প্রবর্তনের ফলে কোন সামাজিক ভারসাম্য অর্জিত হয়নি। কালক্রমে দেশে অনাচার ও শ্রেণীভেদ প্রবল আকার ধারণ করে I

নবশায়কদের অন্যতম ছিল তাম্বুলি সম্প্রদায় I বহুপূর্বে পশ্চিম ভারতের বিভিন্ন জায়গায় ব্যবসাবাণিজ্য করত। কাণ্যকুব্জ বা কণৌজ ভারতের অন্যতম বাণিজ্য কেন্দ্র আর এই বাণিজ্য কেন্দ্রে তারা বসবাস করতেন I ঐতিহাসিক এলফিনস্টোন তার ভারতের ইতিহাসে একজন পর্যক এর কথা উল্লেখ করে লিখেছেন যে কণৌজ নগরে তাম্বুলিরা বহু সংখ্যক ব্যবসা করতো I কালক্রমে বিদেশী আক্রমণের ফলে কণৌজের গৌরবরবি অস্তমিত হবার পর ও পশ্চিম ভারতের তাম্বুলীরা প্রায় 6 শত বছর ব্যবসাবাণিজ্যেরত ছিল I কালক্রমে রাজনৈতিক পটপরিবর্তন , বৈদেশিক আক্রমণের ,অরIজকাগতা ও জনাধিক্যহেতু তাম্বুলিদের এক বৃহৎ অংশ বঙ্গ দেশে চলে আসে  Iএই রূপ অভিবাসনের ফলে অনেক জাতির মিলনক্ষেত্র হয়ে ওঠে এই বঙ্গদেশ। ১০৯৭ খ্রিস্টাব্দে বল্লালসেনের আমলে নবশায়ক সম্প্রদায় ভুক্ত হয়ে তাম্বুলিয়া বাঙালি বলে পরিচিত হন ।

তাম্বুলিরা সৎশুদ্ধ ও নবসায়ক এর এক শায় অর্থাৎ শায়ক শব্দের অর্থ হলো অর্থবান Iএকসময় ব্রাহ্মণগন নিজেদের স্বার্থে ,শীর্ষ সামাজিক প্রতিষ্ঠা বজায় রাখতে অন্য জাতিকে নিচু জাতি চিহ্নিত করতো I শুদ্ধদের কাজ ছিল উচ্চ বর্ণের সেবা করা I কিন্তু তাম্বুলিরা কখনো উচ্চবর্ণের সেবা করেনি I ব্রাহ্মণ্যবাদের পুনঃপ্রতিষ্ঠাকালেও তাম্বুলিরা নিজেদের স্বতন্ত্র বজায় রাখতে সামর্থ্য হয়েছিল । তামুলীরা কখনো শুদ্ধ গোষ্ঠীভুক্ত নয়  ,এরা বণিক বৈশ্য জাতি I

আর তাম্বুলি সমাজের ১২১ তম প্রতিষ্ঠা দিবসের মহাসম্মেলন অনুষ্ঠিত হয়ে গেল রবীন্দ্র ওকাকুরা ভবনে