May 8, 2024

কথা হোক ঘরে বাইরে

যখন বিবিসি তৈরি দুই পর্বের তথ্যচিত্রতে নরেন্দ্র মোদীর ভাবমূর্তি ধাক্কা খেয়েছে। ঠিক সেই সময়ে হিডেনবার্গ রিসার্চের রিপোর্ট কোনোরকম রাখঢাক না করেই জানালো, আদানি গোষ্ঠী কারচুপি করে তাদের সংস্থাগুলির শেয়ার দর বাড়িয়েছে। এই আদানি কেবল ভারত তথা এশিয়ার সবচেয়ে ধনী শিল্পপতি নন, নরেন্দ্র মোদীর ঘনিষ্ঠতম কর্পোরেট বন্ধু। এই আদানি প্রায় উল্কা গতিতে বিশ্বের বিলিয়নার তালিকার শীর্ষে উঠে আসে মোদী জমানাতেই। হিডেনবার্গ রিসার্চের রিপোর্ট থেকে জানা যাচ্ছে, মোদীর বন্ধু গৌতম আদানির মালিকানাধীন সংস্থা মরিশাস, সাইপ্রাস, আরব আমিরশাহীসহ বিশ্বের করমুক্ত অঞ্চলগুলিতে একাধিক ভুয়া কোম্পানি খুলে তাদের মাধ্যমে আদানি গোষ্ঠীর কোম্পানিগুলি শেয়ার নিয়ন্ত্রণ, আর্থিক লেনদেন করে কর ফাঁকি দিচ্ছে এবং কোম্পানির সম্পদ মূল্য ফুলিয়ে ফাঁপিয়ে দেখিয়ে অতিরিক্ত ঋণ নিয়েছে। প্রশ্ন, সরকারের সঙ্গে বেশ ভালরকম বোঝাপড়া না থাকলে কি এধরনের জালিয়াতি করা সম্ভব?

প্রসঙ্গত, গৌতম আদানির নিট সম্পদ ১২ হাজার কোটি ডলার, যার ১০ হাজার কোটি ডলার গড়ে উঠেছে গত তিন বছরে। প্রশ্ন, কি হারে কারচুপি করেশেয়ারের দাম বাড়ালে তবেই এটা সম্ভব? মোদীর বন্ধু গৌতম আদানির বিরুদ্ধে এমন অভিযোগ আজকের তো নয়। এক বছর আগেই আমেরিকার মূল্যায়ন সংস্থাফিচ’- অধীন সংস্থাও একই অভিযোগ তুলেছিল। কেবল তাই নয়, অভিযোগ তুলেছিল ভারতের শেয়ার বাজার নিয়ন্ত্রক সংস্থাসেবি তারা আদানিদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থাও নিয়েছিল। কিন্তু খোদ প্রধানমন্ত্রীর লম্বা হাত যদি লাগাম টেনে ধরেন তাহলে যা হওয়ার তাই হয়েছিল। বড় আশ্চর্যের বিষয়, যে সময় দেশের অর্থনীতির গতি ক্রমশই ধুঁকছে ঠিক সেই সময়েও আদানির লাভের অঙ্ক ছুটছে অশ্বমেধের ঘোড়ার মতো। তারও পরে যখন করোনার ধাক্কায় গোটা বিশ্বের আকাশে মন্দার কালো মেঘ ঘনায়মান তখনও আদানির সম্পদ বাড়তে বাড়তে বিশ্ব রেকর্ড ছুঁয়ে ফেলেছে। প্রতিকূল মন্দা পরিস্থিতিতেও এই হারে কোনোদিন কোনও সংস্থার ব্যবসা, মুনাফা সম্পদ বাড়াটা কি স্বাভাবিক কিংবা স্বচ্ছ পথে হয়েছে?

যেদিনআদানিরবিরুদ্ধেশেয়ারজালিয়াতিরঅভিযোগউঠল, তার দুইদিনপরইছিলআদানিএন্টারপ্রাইজেরএফপিওঅর্থাৎফলোঅনপাবলিকঅফার–তালিকাভুক্তকোম্পানিরনতুনশেয়ারইস্যুবাবাজারেছাড়ারকথা।কিন্তুঘটনাহলপরিস্থিতিরঅবনতিতেহয়েছেএফপিওইস্যুকরাব্যাংকগুলিএফপিও-রদামকমাতেবাশিডিউলপরিবর্তনকরতেচাইছে।প্রসঙ্গত, গতবুধবারহিনডেনবার্গরিসার্চেররিপোর্টপ্রকাশিতহওয়ারপরশনিবারপর্যন্তআদানিগোষ্ঠীরসাতটিকোম্পানিরবাজারমূলধন৪৮বিলিয়নবা৪হাজার৮০০কোটিডলারকমেছে।

লাখ লাখ ভারতীয়র ভাগ্যও ঝুলে আছে এই ঘটনায়। কারণ তারা ব্যাঙ্ক, এলআইসিতে কষ্টার্জিত টাকা জমা রেখেছেন। আদানির শেয়ার জালিয়াতির জেরে বিপুল ক্ষতির মুখে রয়েছে বেশ কয়েকটি ব্যাঙ্ক রাষ্ট্রায়ত্ত বিমা সংস্থা। এলআইসি হল সেই সরকারি প্রতিষ্ঠান যাদের কাছে কেন্দ্র রাজ্য সরকারগুলির দেনা সবচেয়ে বেশি। জীবন বিমা নিগমের কাছ থেকেই সরকারের উন্নয়ন প্রকল্পের বেশিটা আসে। কেবল তাই নয়, জীবন বিমা নিগমও আদানির কোম্পানিতে বিপুল টাকা বিনিয়োগ করেছে। ভারতবাসী জীবন বিমা নিগম বা এলআইসিকে অনেকদিন চেনে জানে কিন্তু আদানিকে কেউই চিনতো বা জানতো না। আদানিকে চিনিয়েছেন নরেন্দ্র মোদী। তিনি ২০১৪ নির্বাচনী প্রচারে আদানির বিমানে চড়েই দেশের কোণায় কোণায় হাজির হতেন। তারপর থেকেই আদানির সম্পত্তির রমরমা বাড়তে থাকে। মোদী তাঁর দল দেশে সব থেকে বেশি ক্ষমতাবান অন্যদিকে আদানি এশিয়ার এক নম্বর ধনী। মোদীর দলও দেশে সবচেয়ে ধনী। কিন্তু এই আদানি এন্টারপ্রাইজ লিমিটেড ঋণের ভারে জর্জরিত। অথচ রাষ্টায়ত্ত ব্যাঙ্ক সেই ঋণে জর্জরিত সংস্থাকেই অতিরিক্ত ঋণ দেয়, বীমা নিগম সেখানেই বেশি বিনিয়োগ করে।