May 20, 2024

কথা হোক ঘরে বাইরে

তিপ্রা মথা সরকার গড়তে পারে ? সরকার গঠনে ভূমিকা নিতে পারে?

ভারতের লোকসভায় আসনসংখ্যা ৫৪৩। তার মধ্যে ত্রিপুরায় মাত্র ২টি। ভারতের সবচেয়ে ছোট রাজ্যগুলোর একটা ত্রিপুরা। তার চেয়ে ছোট কেবল সিকিম গোয়া। জনসংখ্যায়ও ৪০ লাখ মানুষের ত্রিপুরার অবস্থান অনেক নিচে, ২২তম। কিন্তু তারপরও ত্রিপুরার নির্বাচন ভারতীয় বড় বড় দলগুলো নজর রেখেছে। এই নির্বাচনকে আগ্রহ ভরে দেখছে বাংলাদেশও।

ত্রিপুরার তিন দিকেই বাংলাদেশ। বলা যায়, ভারতের অন্য যেকোনো রাজ্যের চেয়ে বাংলাদেশ ত্রিপুরার নিকটতম প্রতিবেশী। রাজ্যে এমন কোনো জিলা নেই যার সঙ্গে বাংলাদেশের সীমান্ত নেই। এখানকার রাজনীতি সমাজজীবনেও অতীতে বাংলাদেশ আলোচ্য বিষয় হয়ে থাকত। এবার অবশ্য পরিস্থিতি সে রকম নয়। এবারকার নির্বাচনে প্রধান আলোচ্য বিষয় ছিলো ত্রিপুরী বা ত্রিপুরা জনগোষ্ঠী নিজেরাই। বৃহত্তরতিপ্রাল্যান্ডচায় তারা। রাজ্যের বাঙালিরা আবার সেটা চায় না। এই বিবাদের মধ্যেই নির্বাচনী প্রচার হয়েছে। বিজেপির চলতি শাসনের নানা অনাচার সহিংসতাও নির্বাচনের হিসাবনিকাশ এসেছিলো।

গত পাঁচ বছরে বিজেপির শাসনের মধ্যেই রাজ্যে নতুন শক্তি হিসেবে দেখা দিয়েছেতিপ্রা মথা একান্তই ত্রিপুরাদের রাজনৈতিক দল। ত্রিপুরী রাজপরিবারের বর্তমান প্রধান প্রদ্যোত মাণিক্য দেব বর্মন তিপ্রা মথা আদিবাসী প্রগতিশীল আঞ্চলিক জোটের বর্তমান চেয়ারম্যান I

কিরীট প্রদ্যোত মাণিক্য দেব বর্মন বাহাদুর একজন ভারতীয় রাজনৈতিক কর্মী। তিনি এবং টাইটুলার রাজা। তিনি নতুন দিল্লিতে  জুলাই ১৯৭৮ সালে  ত্রিপুরার ১৮৫তম মহারাজা কিরীট বিক্রম কিশোর দেববর্মা  এবং মহারাণী বিবু কুমারী দেবীর প্রথম পুত্র হিসাবে জন্মগ্রহণ করেন এবং শিলং থেকেই তার প্রাথমিক থেকে উচ্চ শিক্ষা হয়েছিল। এখন ত্রিপুরার আগরতলায় থাকেন। তিনি TNT-The Northeast Today-এর সম্পাদক হিসেবেও দায়িত্ব পালন করেছেন।   তাঁর মধ্যে তিপ্রা সমাজ তাদেরবোবাগ্রাকে দেখছে। তিপ্রা ভাষায় বুবাগ্রা হলেন রাজা। এবং ত্রিপুরার আদিবাসী ত্রিপুরী জনগণের অধিকারের জন্য একজন সক্রিয় কণ্ঠস্বর।

যুবক বয়সে, প্রদ্যোত মাণিক্য ছিলেন একজন সক্রিয় ভারতীয় জাতীয় কংগ্রেসের রাজনীতিবিদ। তার বাবা কিরীট বিক্রম দেববর্মা তিনবারের সাংসদ ছিলেন এবং মা বিভু কুমারী, দুইবার কংগ্রেস বিধায়ক যিনি ত্রিপুরার রাজস্ব মন্ত্রী হিসেবে দায়িত্ব পালন করেছিলেন। যদিও প্রদ্যোত ২০২১ টিটিএডিসি নির্বাচন পর্যন্ত নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করেননি, তবে তিনি ত্রিপুরার টিপরা জনগণের জন্য প্রতিবাদ, এবং আন্দোলনে সক্রিয় ছিলেন।

২০১৯ সালে ত্রিপুরা প্রদেশ কংগ্রেসের সাথে বিবাদের পরবুবগরা প্রদ্যোত মাণিক্য এনআরসি মামলা দায়েরের বিরোধের কারণে সভাপতির পদ থেকে পদত্যাগ করেন এবং সক্রিয় রাজনীতি থেকে কিছুটা বিরতি নেন। তবে তিনি নাগরিকত্ব সংশোধনী বিল, এর বিরুদ্ধে তার আন্দোলনের জন্য কণ্ঠস্বর এবং সমর্থন পেতে শুরু করেছিলেন। ২০১৯ সালে সংসদে বিল পাস হওয়ার পর থেকে তিনি CAA- বিরুদ্ধে প্রতিবাদে সক্রিয় ছিলেন।

প্রদ্যোত মানিক্য বৃহত্তর তিপ্রা রাজ্যের স্বপ্ন দেখাচ্ছেন

ত্রিপুরার নতুন অহিংস শক্তি ‘তিপ্রা মথা’র মূল চমক প্রদ্যোত মানিক্য। প্রদ্যোতকে ঘিরে আদিবাসী সমাজে মহারাজা বোধের জাগরণ এবারের ভোটে বিজেপি ও সিপিএমকে ভোগাবে মনে হচ্ছে। বুবাগ্রা প্রদ্যোতের রাজনৈতিক পণ্য বৃহত্তর তিপ্রাল্যান্ড। তিনি দক্ষিণ এশিয়ার সব ত্রিপুরীকে একটা বৃহত্তর রাজ্যের স্বপ্ন দেখাচ্ছেন। কিন্তু বাঙালিদের সমর্থন ছাড়া এটা বাস্তবায়নের একটাই উপায়—ত্রিপুরার বিভক্তি। ত্রিপুরার বাঙালিরা সেটাও সমর্থন করছে না। সে কারণে বাঙালি ভোট হারানোর ভয়ে সিপিএম বা বিজেপি তিপ্রাল্যান্ডের দাবি সমর্থন করছে না। তিপ্রা মথার সঙ্গে তারা কেউ জোট করতেও আগ্রহী নয় নির্বাচনের আগে। ৬০ আসনের বিধানসভায় ৪২টি আসনে বিজেপি ও বামদের তৃতীয় প্রতিদ্বন্দ্বী তিপ্রা মথা। ত্রিমুখী এই প্রতিদ্বন্দ্বিতায় শেষমেশ কী ঘটবে, সেটা ধারণা করা মুশকিল। বাঙালিরা যে তিপ্রা মথাকে ভোট দেবে না, সেটা স্পষ্ট। যদিও এই দলের প্রার্থী তালিকায় ট্রাইবাল নয়, এমন জাতির মানুষও আছে।এবারের ভোট হয়েছে ত্রিমুখী। বিজেপি ও সিপিএম প্রধান প্রতিদ্বন্দ্বী হিসেবে থাকলেও তিপ্রা মথাও এখানে সরকার গড়তে পারে বা সরকার গঠনে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা নিতে পারে বলে জোর অনুমান আছে।

সৌরভ রক্ষিত
প্রতিবেদন কথা নিউজ