May 20, 2024

কথা হোক ঘরে বাইরে

বাম-কংগ্রেসের ভোট কেটে বিজেপিকেই সুবিধা দিল তিপ্রামোথা

ত্রিপুরা বিধানসভা নির্বাচনের প্রচারের শুরু থেকেই তিনি ভীষণ রকম প্রাসঙ্গিক। গোটা ত্রিপুরা জুড়েই তাঁকে ঘিরে আলোচনা। রাজনৈতিক মহলের আলোচনাতেও বারবার একটি প্রশ্ন ঘুরপাক খেয়েছে— মহারাজা প্রদ্যোত কিশোর  মাণিক্য দেববর্মা কি এবারের ভোটের পাশা বদলে দেবেন? প্রচার থেকে ভোটপর্ব এমনকি ফল ঘোষণার দিনও আলোচনার কেন্দ্রবিন্দুতে তিনি।

অথচ মাত্র বছর কয়েক আগেই ত্রিপুরার রাজনীতিতে নতুন দল তিপ্রামথা গড়ে তাঁর আবির্ভাব হয়েছিল। দেখা গেল সেই প্রদ্যোত কিশোর মাণিক্য দেববর্মার তিপ্রামোথা এবারের বিধানসভা নির্বাচনে ত্রিপুরায় দ্বিতীয় বৃহত্তম দল হয়েছে। যারা বিধানসভার ৬০টি আসনের মধ্যে ৪২টি আসনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করে ১৩টি আসনে জয় লাভ করেছে।

ত্রিপুরায় উপজাতিদের জন্য সংরক্ষিত আসন সংখ্যা ২০। এর মধ্যে ১০ টি আসনে তারা বড় ব্যবধানে জয় পেয়েছে। তবে ভোটের আগে অনেকেই মনে করেছিলেন, ত্রিপুরায় এবার তিপ্রামোথা পার্টি ‘কিংমেকার’ হয়ে উঠতে পারে, বিজেপির সংখ্যাগরিষ্ঠতায় সেটা হয়নি।

কিন্তু হয়েছে অন্য কিছু। ত্রিপুরা নির্বাচনের আগে রাজনৈতিক মহল মনে করেছিল তিপ্রামোথা বিজেপির সংখ্যা গরিষ্ঠতা পাওয়া বা সরকার গঠনের পথে কাঁটা হতে পারে। অনেক রাজনৈতিক বিশ্লেষক বলেছিলেন, বিজেপির জোট সঙ্গীর থেকে প্রায় সব আদিবাসী ভোটই কেড়ে নিতে পারে তিপ্রামোথা।

সেই ভয় যে বিজেপিও পাচ্ছে এমন কথাও জানিয়েছিলেন অনেকে। যে কারণে ৬০টি আসনের মধ্যে ৪৫টি আসনে লড়েছিল বিজেপি, কেবলমাত্র ৫টি আসন দিয়েছিল আইপিএফটিকে। যদিও বিজেপি অবশ্য ৩২টি আসন জিতেছে। কিন্তু নির্বাচন কমিশনের তথ্য অনুযায়ী, বিজেপির প্রাপ্ত ভোটের হার ৩৮.৯৭ শতাংশ।

অর্থাৎ ২০১৮ সালের বিধানসভা নির্বাচনের নিরিখে ত্রিপুরায় গেরুয়া শিবিরের ফল এবার যথেষ্ট খারাপ হয়েছে। ২০১৮ সালে ৫১টি আসনে লড়াই করে বিজেপি জিতেছিল ৩৫ টি আসন এবং তাদের প্রাপ্ত ভোটের হার ছিল ৪৩.৫৯ শতাংশ। একদিকে আসন সংখ্যা যেমন তিনটি কমেছে, ভোটও কমেছে ৪.শতাংশের মতো।

অন্যদিকে ফলাফল বিশ্লেষণ করে দেখা যাচ্ছে তিপ্রামোথা নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করায় বিজেপির জয়ের পথ অনেকটাই সহজ হয়েছে। সেই সঙ্গে প্রশ্ন উঠছে, নির্বাচনের আগে যেখানে সাধারণ মানুষকে প্রকাশ্যে বিজেপি সরকারের বিরুদ্ধে ক্ষোভ উগরে দিতে দেখা গিয়েছিল, কোন জাদুমন্ত্রে সেই ত্রিপুরায় বিজেপি তাদের ক্ষমতা ধরে রাখতে সক্ষম হল। তবে কি তিপ্রামোথার কাটা ভোট ত্রিপুরায় বিজেপিকে জিততে সাহায্য করেছে।

সাম্প্রতিক কালে বিজেপির চার জন বিধায়ক দল ছেড়েছেন। আইপিএফটির বহু বিধায়ক যোগ দিয়েছেন প্রদ্যোত বিক্রম মাণিক্য দেববর্মনের দল তিপ্রামোথায়। ত্রিপুরার বাঙালি অধ্যুষিত ৪০টি আসনে বিজেপি যথেষ্ট চাপে ছিল। কিন্তু ফলাফলে দেখা যাচ্ছে সেই সব বাঙালি ভোটারদের ভোটের অধিকাংশের সৌজন্যে ফের বিজেপি ক্ষমতায় ফিরে এল। ক্ষেত্রে তিপ্রামোথার যথেষ্ট ভূমিকা রয়েছে। জনজাতি এলাকার ২০টি আসন ছাড়াও  তিপ্রামোথা বাঙালি অধ্যুষিত ২২টি কেন্দ্রেও বার ভোটে লড়ছিল। সেখানেও তারা উল্লেখযোগ্য হারে ভোট টেনেছে। ফলাফলের বিশ্লেষণ দেখে বোঝা যাচ্ছে, জনজাতি এলাকার বাইরের কিছু আসনেও তিপ্রামোথা বিজেপি বিরোধী ভোটে ভাগ বসিয়েছে।

তিপ্রামোথা সরকার গঠনে বিশেষ ভূমিকা নিতে পারলো না ঠিকই কিন্তু তারা ইভিএম-বিজেপিকে ত্রিপুরায় ফিরিয়ে আনলো। অন্যভাবে বলা যেতে পারে বাম-কংগ্রেস জোটের ক্ষমতা দখলের পথে তারা কাঁটার ভূমিকা পালন করলো। 

চিরকালই ত্রিপুরার ভোটে জয়ের নির্ণায়ক সে রাজ্যের জনজাতির ভোট। যখন যে দিকে তারা সমর্থন দিয়েছে, তারাই বাড়তি মাইলেজ পেয়েছে। এই কারণেই বিধানসভা নির্বাচনের আগে বিজেপি তিপ্রামোথার সঙ্গে সমঝোতায় যেতে আগ্রহী ছিল। কিন্তু দিল্লিতে অমিত শাহের সঙ্গে মাণিক্যের বৈঠক ব্যর্থ হয়। কারণ তিপ্রামোথার প্রদ্যোৎ কিশোরের দাবি বিজেপি-কে লিখিত ভাবে পৃথক রাজ্যের দাবিতে সিলমোহর দিতে হবে। বিজেপি সেই দাবি মানতে পারেনি।

ত্রিপুরায় নির্বাচনী প্রচারে এসে অমিত শাহ, রাজনাথ সিংরা বারবার তিপ্রামোথার বিরুদ্ধে তোপ দেগেছেন। বাম-কংগ্রেসের যাত্রা ভেঙে এখন তিপ্রোমোথার সুপ্রিমো বলছেন, গঠনমূলক বিরোধীর ভূমিকা পালনের কথা। নির্বাচনের ফলাফল বলে দিচ্ছে বিজেপি জিতলেও কেবল আসন কমেনি, ভোটের শতাংশও অনেক নেমেছে। প্রশ্ন নবগঠিত সরকারের স্থায়িত্ব নিয়ে পাশাপাশি নতুন দল তিপ্রোমোথার রাজনৈতিক অনুশীলন নিয়েও।