May 15, 2024

কথা হোক ঘরে বাইরে

আদিবাসী অধ্যুষিত পাহাড়ি রাজ্যে আগুন লাগালো কে ?

মণিপুরে এক টানা কয়েক দিন ধরে আগুন জ্বলছে। গোষ্ঠী সংঘর্ষে প্রাণ হারিয়েছেন ১৯ জনের বেশি, আহতের সংখ্যা ৫০০ ছাড়িয়েছে। মণিপুরের এই ভয়ঙ্কর পরিস্থিতির আগে মণিপুর উচ্চ আদালত মণিপুরের বিজেপি সরকারকে মেইথেই সম্প্রদায়কে তপশিলী আদিবাসী সংরক্ষণের আওতায় আনার সুপারিশ জমা দিতে বলে। এই সংরক্ষণের বিরোধিতা করে কুকি সহ অন্যান্য আদিবাসী গোষ্ঠী। তাদের আশঙ্কা মেইথেই সম্প্রদায় আদিবাসী স্বীকৃতি পেলে প্রকৃত আদিবাসীরা জঙ্গলের সাংবিধানিক অধিকার হারাবে। জঙ্গলে ভাগ বসাবে মেইথেই। প্রতিবাদে আদিবাসীরা রাস্তায় নামে।

আদিবাসী অধ্যুষিত পাহাড়ি রাজ্য মণিপুরের ইম্ফল উপত্যকায় বাস করেন মেইথেই সম্প্রদায়ের মানুষ, অন্যদিকে উপত্যকাকে চারিদিক দিয়ে ঘিরে থাকা পার্বত্য অঞ্চলে বাস করেন কুকি স্বীকৃত ৩৪টি উপজাতি গোষ্ঠী। মণিপুরের রাজধানী ইম্ফল সংলগ্ন এলাকায় থাকার ফলে মেইথেইদের রাজনৈতিক অর্থনৈতিক প্রভাব তুলনায় বেশি। এদের মধ্যে অনেকেই প্রতিষ্ঠিত ব্যবসায়ী। একইসঙ্গে এই উপত্যকায় জনঘনত্ব বেশি হওয়ায়, বিধানসভা আসনের সংখ্যাও বেশি। ৬০ মধ্যে ৪০টি। কিন্তু উপত্যকায় জমির পরিমাণ বাড়ন্ত। আবার পার্বত্য অঞ্চলে তপশিলী উপজাতি ছাড়া কেউ জমি কিনতে পারেন না। তার ফলে নিজেদের ব্যবসা এবং প্রভাব বৃদ্ধি করতে মেইথেইদের পাহাড়ে ওঠার দরকার। তাছাড়া ১৯৪৯ সাল পর্যন্ত আদিবাসী চিহ্নিত মেইথেই সম্প্রদায় উপজাতি সংরক্ষণ ফিরিয়ে দেওয়ার দাবীতে মণিপুর উচ্চ আদালতে আবেদন জানান। মেইথেই সম্প্রদায়কে উপজাতি হিসাবে স্বীকৃতিদানের উদ্যোগ শুরু হয়েছে বলে আদিবাসীরা জঙ্গলের অধিকার হারানোর ভয়ে প্রতিবাদ শুরু করেন। বস্তুত আদিবাসীদের মনে অধিকার হারানোর ভয় সৃষ্টি করেছে কেন্দ্র রাজ্যের বিজেপি সরকার।

কেন্দ্রের বিজেপি সরকার দেশের অধিকাংশ জায়গায় হিন্দু ভোটকে এককাট্টা করার চেষ্টা চালালেও মণিপুরে তারা জাতিগত বিভাজনকে বাড়তি গুরুত্ব দিতে সংখ্যাগরিষ্ঠ মেইথেই সম্প্রদায়ের সঙ্গে উপজাতি গোষ্ঠীগুলিকে স্বার্থসংঘাতে প্ররোচিত করেছে, তাতেই জ্বলে উঠেছে দাঙ্গার আগুন। ক্ষমতা ধরে রাখতে বা ক্ষমতায় টিকে থাকতে তাদের প্রধান কৌশল বিভাজনের রাজনীতি এবং মেরুকরণ। তারা কেবল জাতসম্প্রদায়কেই প্রশ্রয় দেয় না, ধর্মীয় সংখ্যাগুরু, জাতসম্প্রদায়গত সংখ্যাগরিষ্ঠকে সঙ্গে রাখার তাগিদে সংখ্যালঘুদের বিরুদ্ধে নানাভাবে ঘৃণাবিদ্বেষ ছড়িয়ে সংখ্যাগুরুদের এককাট্টা করার চেষ্টা করে। দেশের অন্যত্র হিন্দু ভোটকে এককাট্টা করার চেষ্টা হলেও মণিপুরে তারা জাতিগত বিভাজনকে বাড়তি গুরুত্ব দেয়। তারা সংখ্যাগরিষ্ঠ মেইথেই সম্প্রদায়কে হাতে রাখতে চায় ক্ষমতা ধরে রাখার জন্য। তাই তারা কৌশলে আদিবাসীদের সঙ্গে মেইথেইদের বিরোধ, স্বার্থের সংঘাতকে বাধাতে চায়। একই কৌশলে আদিবাসীদের বিরুদ্ধে উচ্ছেদ অভিযান চালায়। তাদের বনজঙ্গলের অধিকার কেড়ে নেবার চেষ্টা করে। বিগত কয়েক বছরে বহু বনবস্তি থেকে আদিবাসীদের উৎখাত করা হয়েছে, একের পর এক গির্জা ভেঙে গুঁড়িয়ে দেওয়া হয়েছে, আদিবাসীদের দখলদারি বলে বুলডোজার অভিযান চালানো হয়েছে এরপর আবার সংখ্যাগরিষ্ঠ মেইথেই সম্প্রদায়কে উপজাতি হিসাবে স্বীকৃতিদানের উদ্যোগ।

বিভাজনএবংমেরুকরনেররাজনৈতিককৌশলেইবিজেপিসংখ্যাগরিষ্ঠহিন্দুমেইথেইদেরবিরুদ্ধেখ্রিষ্টানআদিবাসীদেরলড়িয়েদিয়েছে।স্বদিচ্ছাথাকলেমীমাংশারমাধ্যমেসমস্যামেটাতেপারতবিজেপিমুখ্যমন্ত্রীবীরেনসিংয়েরসরকার।কিন্তুতানাকরেবিজেপিররাজনৈতিকরীতিমেনেইগোষ্ঠীসংঘর্ষেমদতজুগিয়েছে।তাছাড়ামেইথেইব্যবসায়ীদেরঅর্থবলেইবিজেপিমণিপুরেভোটবৈতরণীপারকরেছে।এবারমেইথেইদেরহাতেজঙ্গলেরজমিতুলেদেওয়াইলক্ষ্য।ওদিকেমণিপুরউচ্চআদালতমেইথেইসম্প্রদায়কেউপজাতিবিভাগেঅন্তর্ভুক্তকরারবিষয়টিবিবেচনাকরারজন্যরাজ্যসরকারকেমাত্রচারসপ্তাহসময়দিয়েছে।আদালতেরসেইরায়েরপ্রতিবাদেইমণিপুরেরবিষ্ণুপুরওচন্দ্রচুড়পুরজেলায়হিংসাছড়ায়, আগুনজ্বলে।

যদিও মণিপুরের পাহাড়ি জেলাগুলিতে নাগা এবং কুকি উপজাতিদের আধিপত্য। কিন্তু ইম্ফল উপত্যকার পাঁচটি জেলায় মেইথেইদের আধিপত্য রয়েছে। তবে পাহাড়ের চার জেলায় কুকিরা সংখ্যাগরিষ্ঠ। মণিপুরের কুকি এবং নাগারা হলেন খ্রিস্টান আর মেইথেইরা হলেন হিন্দু। রাজ্যের মোট জনসংখ্যার ৫৩ শতাংশই মেইথেই, যদিও গোটা রাজ্যের মাত্র ১০ শতাংশ এলাকায় তাদের বাস। আর ওই ১০ শতাংশ বাদে বাকি অংশে বাস করেন ৩৫টি উপজাতি, যাদের সিংহভাগই নাগা ও কুকি সম্প্রদায়ের। মণিপুরে আদিবাসী গোষ্ঠীর প্রতিবাদের প্রধান কারণ হল মেইথেই সম্প্রদায় তফশিলি উপজাতির মর্যাদা চাইছে। আদিবাসী গোষ্ঠীর প্রশ্ন, এগিয়ে থাকা স্বত্বেও তাঁরা তফশিলি মর্যাদা কীভাবে পেতে পারেন? আদিবাসী গোষ্ঠীর বক্তব্য, যদি ওঁরা এসটির মর্যাদা পায়, তাহলে আদিবাসীদের সব জমি চলে যাবে। কুকিরা অর্থনৈতিক ভাবে অনেক পিছিয়ে, তাদের নিরাপত্তা প্রয়োজন। একমাত্র ঝুম চাষের ওপর তারা নির্ভরশীল।তাদের জন্য কোনও স্কুল নেই। এ বিষয়ে মেইথেইদের বক্তব্য, এসব কোনো কাজের কথা নয়, আসল কারণ হল রাজ্য সরকার সংরক্ষিত বনাঞ্চল থেকে অনুপ্রবেশকারীদের তাড়াতে চাইছে, তাতেই ভয় পেয়েছে কুকিরা। তার জেরেই অশান্তির সূত্রপাত। বিশেষজ্ঞদের মত, বিজেপি বিভেদ রাজনীতি দিয়ে সম্প্রদায়ের মধ্যে ফাটল ধরাতেই মণিপুরে আগুন লাগিয়েছে।