November 21, 2024

কথা হোক ঘরে বাইরে

ভারত জোড়ো ন্যায় যাত্রা কি লোকসভায় প্রভাব ফেলবে ?

২০২২ সালের ৭ সেপ্টেম্বর থেকে রাহুল গান্ধী ‘ভারত জোড়ো’ যাত্রা করেছিলেন দেশের দক্ষিণ থেকে উত্তরে। তামিলনাড়ুর কন্যাকুমারীকা থেকে কাশ্মীর পর্যন্ত ১৩৬ দিনের সেই যাত্রায় তিনি ১৪টি রাজ্য ও কেন্দ্রশাসিত অঞ্চল ছুঁতে পাড়ি দিয়েছিলেন প্রায় ৪ হাজার কিলোমিটার পথ। ১৪ জানুয়ারি শুরু হচ্ছে ‘ভারত ন্যায় যাত্রা’, এখন অবশ্য সেই নামের সঙ্গে জুড়ে দেওয়া হয়েছে ‘জোড়ো’ শব্দটি। বলা যায় ‘ভারত জোড়ো’ যাত্রার নতুন সংস্করন হল ‘ভারত জোড়ো ন্যায় যাত্রা’। এই যাত্রা উত্তর-পূর্বাঞ্চল থেকে পশ্চিমমুখী, মণিপুর থেকে মুম্বই পর্যন্ত ৬,৭১৩ কিলোমিটারের পথ পরিক্রমা। চব্বিশের লোকসভা ভোটের আগে কংগ্রেস যেমন জনসংযোগ বাড়াতে চাইছে তেমনই এই যাত্রার মাধ্যমে ভোটের হাওয়াও গরম করতে চাইছে। প্রসঙ্গত, ২২ জানুয়ারি প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী অযোধ্যায় রাম মন্দিরের উদ্বোধন করে লোকসভা ভোট প্রচারের রথ ছোটাবেন আর ঠিক আট দিন আগে রাহুল গান্ধী ভারত জোড়ো যাত্রায় নামলেন।

লোকসভা ভোট এবং রামমন্দির উদ্বোধনের ঠিক আগে রাহুলের এই নতুন কর্মসূচি যে বেশ ‘তৎপর্যপূর্ণ’ তা বলাই বাহুল্য। ‘ভারত জোড়ো ন্যায় যাত্রা’য় বাসযাত্রা হলেও পদযাত্ত্রা থাকছে, প্রতিদিন গড়ে অন্তত ৮-১০ কিমি।রাহুল গান্ধী রোজ বিভিন্ন ব্যক্তি ও সংগঠনের সঙ্গে দেখা করবেন, আলোচনা করবেন। নাগরিক সমাজের প্রতিনিধিদের সঙ্গেও তিনি কথা বলবেন, মাঝে মধ্যে সভা-সমাবেশও হবে। তার মানে যাতে মানুষের কাছাকাছি পৌঁছনো যায়, জনসংযোগ তৈরি হয় তার জন্যই এরকম পরিকল্পনা। এই যাত্রার মধ্যে পড়বে ১০০ লোকসভা ও ৩৩৭টি বিধানসভা কেন্দ্র। উল্লেখ্য, ভারত জোড়ো ন্যায় যাত্রা সবচেয়ে বেশি দিন ধরে হবে বিজেপি শাসিত উত্তরপ্রদেশে ও অসমে। যোগী আদিত্যনাথের রাজ্যে ১১ দিন ধরে ১০৭৪ কিলোমিটার এবং অসমে ৮ দিন ধরে ৮৩৩ কিলোমিটার যাত্রা হবে। এরপর ৭ দিন ধরে মধ্যপ্রদেশে ৬৯৮ কিলোমিটার, ৫ দিন ধরে গুজরাটে, ৮ দিন ধরে চলবে ঝাড়খণ্ডে। ১৪ জানুয়ারি মণিপুরের ইম্ফলে যাত্রার সূচনা, সেখানে ১ দিন, নাগাল্যান্ডে ২ দিন, অরুণাচলপ্রদেশে ১ দিন, মেঘালয়ে ১ দিন।

রাহুলের ‘ভারত জোড়ো ন্যায় যাত্রা’ লোকসভার ভোট বাক্সে কতটা প্রতিফলন ফেলবে? ইতিমধ্যে যে চার রাজ্যের বিধানসভা ভোটের ফল প্রকাশিত হয়েছে তারমধ্যে তিনটি রাজ্যে রাহুল গান্ধীর ভারত জোড়ো যাত্রা করেছিলেন। তার মধ্যে তেলঙ্গনায় কংগ্রেস জয় হাসিল করেছে। কিন্তু মধ্যপ্রদেশ ও রাজস্থানে ভারত জোড়ো যাত্রার কোনও প্রভাব পড়েনি। এমনকি ছত্তীসগড়েও কংগ্রেস হেরেছে। যদিও ভারত জোড়ো যাত্রা পথে ছত্তীসগড় ছিল না। তামিলনাড়ু থেকে কাশ্মীর পর্যন্ত ভারত জোড়ো যাত্রা পথে রাহুল সাড়া পেয়েছিলেন কর্নাটক এবং পড়শি তেলঙ্গনায় এমনকি মধ্যপ্রদেশ এবং রাজস্থানেও। কিন্তু ভোটের বাক্সে তার প্রতিফলন ঘটেনি। কর্নাটকের পর তেলঙ্গনাতেও কংগ্রেস জয়ী হয়েছে , কর্নাটকের সঙ্গে পাহাড়ি রাজ্য হিমাচলপ্রদেশেও বিধানসভা ভোট হয়। ভারত জোড়ো যাত্রা এই দুই রাজ্যকেও ছুঁয়েছিল। সেখানেও কংগ্রেস ক্ষমতায় ফেরে। যদিও হিমাচলের ফলাফল জাতীয় রাজনীতিতে ততটা গুরুত্বপূর্ণ নয়।সব মিলিয়ে ভারত জোড়ো যাত্রায় সাড়া মিললেও হিন্দিবলয়ে ভোটের বাক্সে তার প্রতিফলন নেই। প্রশ্ন তৃণমূল কি রাহুল গান্ধীর যাত্রায় অংশ নেবে? এখনো পর্যন্ত তাদের মনোভাব নেতিবাচক। তাদের বক্তব্য, আগে আসন সমঝোতা নিয়ে কংগ্রেস কথা বলুক। তার পরে বাকি ভাবনা।