অবশেষে ৪২ দিন পর জুনিয়র ডাক্তাররা তাদের কর্মবিরতি আংশিক তুলে নেওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছেন।গত ন’দিন ধরে সল্টলেকে স্বাস্থ্য ভবনের সামনে তাদের ধর্না চলছিল। রাজ্য সরকারের সঙ্গে বিভিন্ন দফায় বৈঠক করে আন্দোলনকারীরা অনেক দাবি পূরণের আশ্বাস পেয়েছেন, তবে কিছু দাবি এখনও ঝুলে আছে। কলকাতার পুলিশ কমিশনারকে এবং স্বাস্থ্য কর্তাদের অপসারণকে তারা জয় হিসেবে দেখছেন। অন্যদিকে সন্দীপ ঘোষ ও অভিজিৎ মণ্ডলের গ্রেফতারিকেও তারা আন্দোলনের ফল বলেই মনে করছেন। তবে সুবিচার না পাওয়া পর্যন্ত তারা তাদের আন্দোলন অব্যাহত রাখার সিদ্ধান্ত নিয়েছেন।
মাত্র একটি ঘটনায় সহসা বাঙালি মধ্যবিত্তের সমষ্টিগত বিবেকবোধ দারুণ বেগে জেগে উঠলো এবং দাবানলের মতো ছড়িয়ে পড়লো বাংলার বিভিন্ন অঞ্চল থেকে প্রান্তরে। বাংলার অতীত কালের ইতিহাসে এমনটা ঘটেছিল কিনা তা নিয়ে প্রশ্ন থাকলেও বলা যায় অশীতিপর মহিলা যিনি এতকাল মিছিল দেখেছেন খিড়কি থেকে, তিনিও রাস্তায় নেমে এসে মিছিলে পা মিলিয়েছেন। এতকাল যে তরুণী কোনও প্রতিবাদ সভা সমাবেশের আঁচ থেকে নিজেকে শত হাত দূরে রেখেছিলেন, তিনিও তাঁর মুষ্টিবদ্ধ হাত তুলে স্লোগান দিচ্ছেন। প্রতিদিন সেক্টর ফাইভে অফিসে ঢোকা আর সন্ধ্যার পর বাড়ি ফেরা ছাড়া যে আইটি কর্মী জীবনে অন্য কোনও ক্ষেত্রেই অংশগ্রহণ করার সময় পেতেন না, তিনিও পথে নেমে এসেছেন প্রতিবাদীর ভূমিকায়। তাই বলাই যায় এই ধরনের গণ আন্দোলন কেবল দেশের স্বাধীনতা সংগ্রাম তো বটেই, উত্তরকালেও সর্বস্তরের এত সংখ্যক সাধারণ মানুষের উৎসাহের সাথে বিচারের দাবীতে অংশগ্রহণ বাংলা কখনো দেখেনি।কিন্তু এর থেকেও গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হলো সাধারণ মানুষ যেখানে বিচারের দাবীতে রাস্তায় নেমেছেন, সেখানেই মেয়েদের লক্ষ্যনীয় অংশগ্রহণ এবং বলাই বাহুল্য আরজি কর হাসপাতালে মহিলা চিকিৎসকের নৃশংস ধর্ষণ-খুন-এর প্রতিবাদে দেশজুড়ে যে প্রতিবাদের ঝড় তার মধ্যেই স্বাধীনতার মাঝরাতে পথের দখল নিয়েছিলো মেয়েরা। সেই জমায়েতে সামিল হওয়ার বার্তা ছিল রাজনৈতিক রঙ ছেড়ে শুধুমাত্র নারী সুরক্ষা আর তাতেই সাড়া দেয় গোটা রাজ্য। বালি থেকে বেহালা, কোচবিহার থেকে কলকাতা স্বতস্ফূর্ত প্রতিবাদে দেখা গেল এই বাংলার মেয়েরাই নেতৃত্ব দিলেন। উনিশশো পঁচাত্তর সালে আমেরিকার ফিলাডেলফিয়াতে গভীর রাতে ল্যাবরেটরি থেকে বাড়ি ফেরার পথে খুন হয়েছিলেন মাইক্রোবায়োলজিস্ট সুজ়ান স্পিথ। সেই খুনের প্রতিবাদে শুরু হয়েছিল ‘টেক ব্যাক দ্য নাইট র্যালি’। পরে উনিশশো ছিয়াত্তর সালে জার্মানি এবং উনিশশো সাতাত্তর সালে ইংল্যান্ডের লিডসে এমন আন্দোলন শুরু হয়। বাংলায় সেই ইতিহাসের পুনরাবৃত্তি হয় স্বাধীনতা দিব সের মধ্যরাতে।
More Stories
ভারত পাকিস্তান বর্ডারে মোদি I পাকিস্তানের ঘুম উড়লো
এথিক্স ব্রেক করছেন কি ডাক্তারবাবুরা ?
সুপ্রিম কোর্টের শুনানি I R G KAR – খুন ধর্ষণ মামলা#supremecourt