মার্চ থেকেই গরম বাড়তে শুরু করেছিল। এপ্রিলের মাঝামাঝি থেকেই হাঁসফাস শুরু হয়েছিল। তখন থেকেই বোঝা যাচ্ছিল এবার গরম কতটা বেগ দেবে। চৈত্রের শেষ থেকেই চারদিকে কাঠফাটা রোদ্দুর। তাপমাত্রা ৪০ ডিগ্রির কাছাকাছি। ঘরে গুমোট, বাইরে চলছে তাপপ্রবাহ। আবহাওয়া দফতর জানিয়েছে, আগামী আরও কয়েকদিন পর্যন্ত তাপপ্রবাহ ও অস্বস্তিকর গরম থাকবে। কিন্তু, আসল প্রশ্ন একটাই আগে কোনও বৈশাখে কী কলকাতায় এত গরম পড়েছিল? আবহাওয়া দফতরের রেকর্ড অনুসারে, ১৯৮০ সালের এপ্রিল মাসের মাঝামাঝি সময় কলকাতায় সর্বোচ্চ তাপমাত্রা উঠেছিল ৪১.৭ ডিগ্রি সেলসিয়াস, ২০১৪ সালে ৪১.৩ ডিগ্রি সেলসিয়াস এবং ২০১৬ সালের ৪১.২ ডিগ্রি সেলসিয়াস।
বিশেষজ্ঞরা বলছেন আগামী বছর পরিস্থিতি আরও খারাপ হবে। এই পরিস্থিতির হাত থেকে মুক্তি নেই। কিন্তু, কেন এত গরম পড়ছে কেন? আবহাওয়ার পরিবর্তন ঘটছে। জলবায়ু বদলাচ্ছে। স্বাভাবিকভাবেই গরম বাড়ছে। ভূপৃষ্ঠের উত্তাপ ধীরে ধীরে আরও বাড়বে। গরমকালে মারাত্মক গরম পড়বে। শীতকালে ভীষন ঠান্ডা পড়বে। এমনটাই হচ্ছে এবং ভবিষ্যতেও হবে। এসব কথা আমরা বেশ কয়েক বছর ধরেই শুনে আসছি। সোশ্যাল মিডিয়ায় পরিবেশ বিজ্ঞানী ছাড়াও আরও অনেকেই এই বিষয়ে বহুদিন ধরেই সরব। এদের মধ্যে একাংশ গাছ কাটার বিরুদ্ধে সরব হয়েছেন। সচেতন মানুষেরা গাছ লাগানোর এবং গাছ বাঁচানোর আবেদন জানাচ্ছেন। ঠিকই তো আমাদের চারিদিকে যে পরিস্থিতি, সে কথা ভেবে এখনি আমাদের সচেতন হওয়া জরুরী।
আমাদের দেশে ঘটেছে পরিকল্পনা হীন ব্যাপক নগরোন্নয়ন।বিপুলহারে জনসংখ্যাবৃদ্ধির কারণে মানুষের বাসস্থানের চাহিদা মেটাতে মানুষ গাছ কেটে, পুকুর বুজিয়ে নগরোন্নয়ন ঘটিয়েছে কলকাতা এবং আশপাশে। বাদ পড়েনি জেলা শহরবা গ্রামাঞ্চল।আকাশ্চুম্বি বাড়ির সংখ্যাকে বল আকাশটাকেই যে ঢেকে ফেলেছে তাইনয়, সবুজ উচ্ছে দহয়েছে নির্মমভাবে।এই সবকারণেই বাংলার আবহাওয়াবি গতকয়েক বছর ধরে খামখেয়ালি হয়ে উঠেছে। কলকাতাতো এখন হিট-আইল্যান্ড হয়েগিয়েছে।আগামী কয়েক বছরের মধ্যে কি প্রকৃতির উপর এই ধরণের নির্মম অত্যাচার থামানো সম্ভব? যদি উষ্ণায়ণকে ইরোখানাযায়, তাহলে আমাদের আর ও চরম পরিস্থিতির জন্য তৈরি থাকতে হবে।আমরা এসব তত্ত্বকথা মুখেই বলে চলেছি, কার্যত বাস্তবে তার কোন ও প্রয়োগ এখনও দেখা যাচ্ছে না।
আসলে কলকাতা–সহ সমগ্র বাংলার সবুজ প্রকৃতি এখন ইট কাঠ কংক্রিটের কড়াল গ্রাসে। সবুজের পরিবর্তে উন্নয়ন ঘটছে চুন–সুড়কি–ধাতুর নগরের। সেই কংক্রিটের জঙ্গলে আটকা পড়েছে গরম বাতাস। পরিবেশ থেকে সেই গরম বাতাস বেরিয়ে যাওয়ার তো জায়গা চাই। কিন্তু চারপাশের আকাশছোঁয়া বাড়ি, ধাতব টাওয়ার, শপিং মল ঠান্ডা মেশিন থেকে নিঃসৃত হাওয়া বাতাসকে একদিকে যেমন আটকে দিচ্ছে, অন্যদিকে ঢূকতে দিচ্ছে না ঠান্ডা বাতাস। ফলে পরিবেশ ঠান্ডা হওয়ার কোনও অবকাশ নেই। তাই শীতকালেও বিকেল বা সন্ধের পরে তাপমাত্রা বাড়ছে।